সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সাহিত্যিক জীবনে সুনীলের হাতেখড়ি বাবার হাত ধরেই। বাবা তাকে ব্রিটিশ কবি টেনিসনের একটি কাব্যগ্রন্থ দিয়ে বলেছিলেন, "প্রতিদিন এখান থেকে দুটি করে কবিতা অনুবাদ করবে।"

এটি মূলত করা হয়েছিল তিনি যেন দুপুরে বাইরে যেতে না পারেন। বন্ধুরা যখন সিনেমা দেখত সুনীল তখন 'পিতৃআজ্ঞা শিরোধার্য' করে দুপুরে কবিতা অনুবাদ করতেন। অনুবাদ একঘেঁয়ে হয়ে উঠলে তিনিই নিজেই লিখতে শুরু করেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৫৩ সাল থেকে কৃত্তিবাস নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন, ১৯৬৬ সালে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়।

আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ হলো তার উল্লেখযোগ্য রচনা।

শিশুসাহিত্যে তিনি 'কাকাবাবু-সন্তু' নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচনা করেন।

নীললোহিত তার ছদ্মনাম। এই নামটি দিয়ে তিনি নিজের একটি আলাদা সত্ত্বা তৈরি করেছেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ কিছু গল্প-উপন্যাসের কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অরণ্যের দিনরাত্রি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া গোয়েন্দা সিরিজের কাকাবাবু চরিত্রের দুটি কাহিনী সবুজ দ্বীপের রাজা, কাকাবাবু হেরে গেলেন, মিশর রহস্য চিত্রায়িত হয়েছে।

সাহিত্যিক হিসেবে সম্মাননাও পেয়েছেন অনেক। ২০০২ সালে তিনি কলকাতা শহরের শেরিফ নির্বাচিত হন।

১৯৭২ ও ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার এবং ১৯৮৫ সালে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন।

তিনি ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর মারা যান। তবে মৃত্যুর আগে ২০০৩ সালের ৪ এপ্রিল কলকাতার ‘গণদর্পণ’কে সস্ত্রীক মরণোত্তর দেহ দান করে যান। কিন্তু তার একমাত্র ছেলে সৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ইচ্ছেতে ও পশ্চিম বঙ্গ সরকারের ব্যবস্থাপনায় তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।

Post a Comment

0 Comments