স্বপ্ন না ভ্রম? : আলমগীর ইসলাম শান্ত


আমি মৃত মানুষটির সঙ্গে ঐ স্কুলের ক্লাস রুমে একা ছিলাম। তখন সন্ধ্যা হবে হবে ভাব। মানুষটি সম্ভবত রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছিল। আমার একটা রাষ্ট্রীয় সিরিজের অভিনয় শুট চলছিল। শুটিং স্পট থেকে আমাকে নেওয়া হলো ঐ লাশের সঙ্গে যাওয়ার জন্য। যথারীতি লাশের গোসল করিয়ে ক্লাস রুমে বেঞ্চের উপরে শুইয়ে রাখা হলো। কিছুক্ষণ পরে অনুভব করলাম লাশ নড়াচড়া করছে। আমি তার মুখের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। আশ্চর্য ব্যাপার হলো লাশ আমাকে দেখে জরাজীর্ণ চোখ মেলে এক গাল হেসে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করলো। আমি প্রচন্ড ঘাবড়ে গেলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে লাশের সঙ্গে তাল মেলাতে চেষ্টা করলাম। মৃত মানুষটির বয়স আনুমানিক সত্তর/বাহাত্তর বছর হবে। বিভৎস চেহারার মানুষটির দিকে যে কেউ তাকালেই সে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে। লাশ আমাকে ইশারায় কাছে ডাকলেন। আমি তার মাথার কাছেই বসেছিলাম। তার মুখের কাছে কান নিতেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য হামড়িয়ে ওঠে। আমি খুব চেষ্টা করে নিজেকে উদ্ধার করে ঐ লাশের ক্লাস রুম থেকে দৌঁড় দিয়ে নিচের তলায় অর্থাৎ মাঠে চলে এলাম কিন্তু কি আশ্চর্য! লাশটি আমার আগেই মাঠে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে। আমি দৌড় দৌড় আর দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে কোলকাতায় আমার বড় বোনের বাসায় চলে গেলাম হাপাতে হাপাতে। 

কিন্তু কিছুদিন পূর্বে তাদের ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আপাতত তারা ঘরহীন দিন যাপন করছে। কিছু অনুদানে আহার ও কাপড়-চোপড় পেয়েছে। ঘর বাধার জন্য ব্যাংক একাউন্টে চল্লিশ হাজার টাকা আসার কথা। যেহেতু নিজেদের ব্যাংক একাউন্টে কিছুদিন থেকে ঝামেলা তাই পাশের বাড়ির এক পৌঢ় মহিলার একাউন্টে অনুদানের চল্লিশ হাজার টাকা আনার ব্যাপারে কথা হয়েছিল। সে ব্যাপারে আমার বড় বোন তখন ঐ পৌঢ় মহিলার (যিনি মূলত খুচরো সদাই তরিতরকারি বিক্রেতা) কাছে যাচ্ছিলেন এবঙ আমাকেও সঙ্গে নিলেন। মহিলার কাছে অনুদানে পাওয়া চল্লিশ হাজার টাকা চাওয়ায় বোনের উপরে চড়া হয়ে বলে কিসের টাকা? কোনো টাকা দিতে পারব না। ইত্যাদি ইত্যাদি। 

আমার বোন প্রথমত তার ঘরবাড়ি হারিয়ে চরম ভাবে হতাশায় ভুগছিলেন আর যখন ঘর বানানোর অনুদানের টাকা নিয়ে এই রাজনীতি শুরু হলো তখন আমার চোখের সামনেই বোন ধপ করে বসে পড়ে। অসহায়ত্ব তার চোখেমুখে। আমি কোনো কিছু ভাবনা ছাড়াই পৌঢ় কালো কুৎসিত মহিলার উপর ক্ষিপ্ত হলাম। বললাম এক্ষুনি টাকা দিয়ে দে বেটি, নইলে তোর জান নিব আমি। মহিলাটি আমার উপরেও চড়াও হয়। আমি নিজের রাগ সংবরণ করতে পারি নি তখন কেননা আমি একটু ঘাড় ত্যাড়া মানুষ। কালো কুৎসিত পৌঢ় মহিলার চুল ধরে হ্যাচকা টান মেরে রাস্তায় যখন বের করলাম তখন সবাই জড়ো হতে লাগলো একে একে। ভাবলাম বিচার এবার হবে এই বেটির। কিন্তু নিমিষেই সবাই কানাঘুষা করতে করতে আমার আর বোনের দিকে চোখ বাকিয়ে দ্রুত গতিতে স্থান ত্যাগ করলেন। সবাই চলে যাওয়ার পরে দেখলাম দূর রাস্তা দিয়ে মহল্লায় ঐ লাশটি আমাদের দিকে হেটে হেটে আসছে। আমি বোনকে নিয়ে দৌড় দিতে উদ্ধত হলাম। বোন বলল কোনো লাভ নাই ঐ লাশ পিছু ছাড়বে না। আমি বললাম তুই কিভাবে জানিস এই লাশের ব্যাপারে? সে তো আজই রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। বুবু বলল এই লাশ বড় বিপজ্জনক। সে অভিশপ্ত। বোনকে সঙ্গে নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে কোলকাতার গুজরাটে চলে এলাম। 

এদিকে সেহরির সময় বয়ে যাচ্ছে বারবার মসজিদে মুয়াজ্জিন বলছে সেহরির সময় আর মাত্র ২৭ মিনিট বাকি আছে। আমরা দৌড়াচ্ছি দৌড়াচ্ছি এবঙ দৌড়াচ্ছি। কিন্তু পথ শেষ হচ্ছে না। ....... 

যখন ঘুম ভেঙ্গে গেলো শান্তর তখন সে দ্রুত উঠে সেহরির করে এই লেখাটি লিখতে বসলো ফেসবুকে। কি আশ্চর্য! লিখতে গিয়ে বারবার হাত যেন অবশ হয়ে যাচ্ছিলো। এটা কি স্বপ্ন না ভ্রম? লেখা শেষ করে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। ভাল থাকবেন আর সাবধানে থাকবেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রাখবেন। 


শিক্ষার্থী
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা
৬ মে ২০২১, মিরপুর, ঢাকা


Post a Comment

1 Comments