জেরুজালেমের নীলছায়া - আলমগীর ইসলাম শান্ত


উপন্যাসের শিরোনাম: জেরুজালেমের নীলছায়া

আলমগীর ইসলাম শান্ত

________________________________________

প্রথম অধ্যায়: রহস্যময় পাণ্ডুলিপি

ঢাকার এক পুরনো বইয়ের দোকানে, ধুলোমাখা কাঠের তাকের কোণে, একটি অদ্ভুত পাণ্ডুলিপি আবিষ্কার করে তরুণ ইতিহাসবিদ জাবের মাহমুদ। পাণ্ডুলিপিটি একটি পুরনো হিব্রু ভাষায় লেখা, যার কিছু কিছু অংশে বাংলার সাথে অদ্ভুত মিল। বইটির উপরিভাগে অদ্ভুত একটি চিহ্ন খোদাই করা—দুই মাথাওয়ালা সিংহের ছবি।

জাবেরের সাথে তার বিশ্বস্ত বন্ধু শান্ত এবং প্রেমিকা আশিকা জান্নাতও আছে। তারা তিনজনই প্রাচীন ইতিহাস এবং রহস্যের প্রতি গভীর আগ্রহী।

বইটি হাতে নিয়ে জাবের টের পায়, এর ভেতর লুকিয়ে আছে এমন কিছু যা শুধুমাত্র বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কিছু গোপন চাবি, সংকেত আর প্যারাগ্রাফে ছড়ানো রহস্য তাকে টেনে নিয়ে যায় এক গভীর ইতিহাসের অন্ধকারে।

________________________________________

দ্বিতীয় অধ্যায়: প্রথম সংকেত

পাণ্ডুলিপি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে জাবের দেখতে পায় একটি সংকেত যা ইসরায়েলের জেরুজালেম শহরের একটি প্রাচীন স্থানকে নির্দেশ করে। তার এক বন্ধুর, প্রাচীন লিপি বিশেষজ্ঞ শান্ত, সাহায্যে সে নিশ্চিত হয় যে এই পাণ্ডুলিপি ক্রুসেডার যুগের। পাণ্ডুলিপির মধ্যে উল্লেখ রয়েছে এক গুপ্তধনের, যা "ঈশ্বরের নীল আলো" নামে পরিচিত।

জাবের, আশিকা এবং শান্ত সিদ্ধান্ত নেয় জেরুজালেম যাওয়ার। কিন্তু তাদের ধারণা নেই, এই যাত্রা কেবল ইতিহাসের রহস্য উদঘাটন নয়, বরং এক মারাত্মক বিপদের মুখোমুখি হওয়ার গল্প। তাদের সাথে আছে একটি প্রশিক্ষিত বাজপাখি, যার নাম তারা দিয়েছে "শাহীন।" এই বাজপাখি সংকেত খুঁজে বের করতে এবং তাদের বিপদের পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করে।

________________________________________

তৃতীয় অধ্যায়: পেছনে ছায়া

জেরুজালেম পৌঁছানোর আগেই, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের অনুসরণ করে এক রহস্যময় ব্যক্তি। তিনি কালো স্যুটে আবৃত, চোখে কালো সানগ্লাস। তার পরিচয়—এক আন্তর্জাতিক গুপ্তচর সংস্থার এজেন্ট, যিনি "ঈশ্বরের নীল আলো" খুঁজছেন বহু বছর ধরে।

জেরুজালেম পৌঁছে, জাবের, আশিকা এবং শান্ত বুঝতে পারে, তাদের অনুসরণ করা হচ্ছে। স্থানীয় গাইড ইলিয়াসের সাহায্যে তারা শুরু করে শহরের প্রাচীন স্থানগুলোর অনুসন্ধান। প্রতিটি মন্দির, প্রাচীর আর সুড়ঙ্গ যেন লুকিয়ে রেখেছে এক অজানা ইতিহাস।

তাদের তিনটি দ্রুতগামী ঘোড়া—বিজয়, তুফান এবং ঝড়—তাদের গন্তব্যে দ্রুত পৌঁছাতে সাহায্য করে।

________________________________________

চতুর্থ অধ্যায়: সুড়ঙ্গের গভীরে

পুরনো শহরের এক নির্জন রাতে, তারা প্রবেশ করে জেরুজালেমের বিখ্যাত সুড়ঙ্গে। সেই সুড়ঙ্গে নেমে আসে এক চিলি বাতাস, আর তার সাথে সাথে ভেসে আসে দূর অতীতের ছায়া। সুড়ঙ্গের দেয়ালে খোদাই করা আছে অসংখ্য সংকেত।

একটি সংকেত পড়তে গিয়ে আশিকা আচমকা চিৎকার করে ওঠে। দেয়ালের একটি চিহ্ন তার আঙুল স্পর্শ করতেই দেয়াল কেঁপে ওঠে। আর একটি গোপন দরজা খুলে যায়। দরজার ওপাশে, তাদের সামনে উন্মোচিত হয় এক প্রাচীন গুপ্ত কক্ষ।

________________________________________

পঞ্চম অধ্যায়: শত্রুর মুখোমুখি

কিন্তু সেই গুপ্ত কক্ষে প্রবেশ করার মুহূর্তেই তাদের ঘিরে ফেলে একদল সশস্ত্র মানুষ। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে সেই রহস্যময় ব্যক্তি। তার পরিচয় জানায়—তার নাম ম্যাথিয়াস, যিনি "অ্যাঞ্জেলস অফ ডার্কনেস" নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রের নেতা। এই চক্র পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন রহস্য আর ক্ষমতার সন্ধানে আছে।

তাদের লক্ষ্য একটাই—ঈশ্বরের নীল আলো। কিন্তু ম্যাথিয়াস জানে না, জাবের, আশিকা এবং শান্ত ইতিমধ্যেই খুঁজে পেয়েছে সেই গুপ্তধনের আসল মানে। এটি কেবল সোনা বা হীরা নয়, বরং এমন একটি জ্ঞান যা পুরো পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে।

________________________________________

ষষ্ঠ অধ্যায়: সম্পর্কের জটিলতা

তাদের অভিযান চলতে থাকে, আর তারা বিভিন্ন দেশে বিপজ্জনক মিশনে অংশ নেয়। তাদের ঘোড়াগুলো—বিজয়, তুফান এবং ঝড়—তাদের দ্রুত চলাচলে সাহায্য করে। জাবের এবং শান্ত শত্রুদের সঙ্গে লড়াইয়ে অনেকবার সফল হয়। তরবারির আঘাতে বহু শত্রুর শিরোচ্ছেদ করে তারা। তাদের বীরত্ব স্থানীয় লোকদের মধ্যে সুনাম অর্জন করে।

এদিকে, আশিকা ধীরে ধীরে শান্তর প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে। শান্তর অমায়িক ব্যবহার তাকে মুগ্ধ করে। কিন্তু শান্ত আশিকাকে বোনের মতোই দেখে। এই দূরত্ব ক্রমশ তাদের মধ্যে জটিল সম্পর্কের সূচনা করে। শান্ত ইচ্ছাকৃতভাবে আশিকার কাছ থেকে দূরে সরে যায়।

জাবের এই পরিবর্তন লক্ষ্য করে এবং এটি তাকে অস্বস্তিতে ফেলে। একদিন আশিকা জাবেরের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ জানায়। জাবের এবং আশিকার মধ্যে এ নিয়ে মনমালিন্য হয়। তাদের সম্পর্কের এই টানাপোড়েন তাদের অভিযানের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে।

________________________________________

সপ্তম অধ্যায়: পাহাড়ের চূড়ায় নতুন পরিকল্পনা

একদিন শান্ত পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সারা দিন এবং রাত কেটে যায় এক গভীর ধ্যানে। জাবের এবং আশিকা তার খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারে, শান্ত একটি নতুন মানচিত্র নিয়ে ফিরে এসেছে। সেই মানচিত্রে শত্রুদের ঘাঁটির অবস্থান এবং তাদের ধ্বংস করার পরিকল্পনা চিহ্নিত করা হয়েছে।

মানচিত্রে লেখা রয়েছে, কীভাবে কাফেরদের দুর্গ ছিনিয়ে নিয়ে ইসলামী পতাকা উড়ানো হবে। শান্ত এই পরিকল্পনাগুলো নিয়ে আসে গভীর বিশ্বাস এবং দৃঢ় মনোবল নিয়ে। এটি দেখে জাবের এবং আশিকা তার প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে। তাদের যাত্রা যেন উসমানীয় খিলাফতের আত্রুগ্রুলের মতো রোমাঞ্চকর এবং ঐতিহাসিক হয়ে ওঠে।

________________________________________

অষ্টম অধ্যায়: বনের বিপদ

একদিন আশিকা অনেক অভিমান নিয়ে গভীর জঙ্গলে হাঁটতে থাকে। তার মনে শান্তর প্রতি অভিমানের তীব্র ভার। কিন্তু হঠাৎ করেই বন্য কাফেরদের একটি দল তার উপর আক্রমণ করে। তারা তাকে বন্দি করার চেষ্টা করে।

আশিকার চিৎকার শুনে শাহীন বাজপাখি উড়ে গিয়ে সংকেত পাঠায়। শান্ত দ্রুত বিজয় ঘোড়ায় চড়ে সেখানে পৌঁছে যায়। শুরু হয় এক ভয়াবহ যুদ্ধ। শান্ত নিজের তরবারি নিয়ে একের পর এক কাফেরদের মোকাবিলা করে। রক্তের স্রোত বয়ে যায় সেই বনে।

শেষ পর্যন্ত শান্ত আশিকাকে রক্ষা করে। কিন্তু এই যুদ্ধে শান্ত গুরুতর আহত হয়। আশিকা তাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে। শান্ত তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, "তোমার জীবনের জন্য আমি সবকিছু করতে পারি।"

এই ঘটনার পর আশিকা বুঝতে পারে, শান্ত তাকে বোনের মতো দেখলেও তার প্রতি তার সুরক্ষা এবং ভালোবাসা নিঃস্বার্থ। তাদের সম্পর্ক নতুন মোড় নেয়।

________________________________________

নবম অধ্যায়: যুদ্ধ, বিচ্ছেদ এবং জিহাদ

তাদের দল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যায়। প্রতিটি যুদ্ধে তাদের সাহস এবং কৌশল প্রদর্শিত হয়। শত্রুদের উপর বিজয় অর্জন করতে তারা নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করে। জিহাদের মাধ্যমে তারা ইসলামের পতাকা উঁচু করে এবং বহু মানুষের হৃদয়ে আশা জাগিয়ে তোলে।

কিন্তু এই যাত্রা সহজ নয়। প্রতিটি যুদ্ধের সাথে তাদের সম্পর্ক এবং বন্ধনগুলো নতুন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। জাবের, শান্ত এবং আশিকার মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং বিচ্ছেদ কখনো তাদের যাত্রাকে থামিয়ে দেয় না। তাদের লক্ষ্য থাকে একটাই—একটি ন্যায়পরায়ণ এবং সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়া।

________________________________________

শেষ অধ্যায়: আলোর পথে

গুপ্তধন উদ্ধারের শেষ মুহূর্তে, এক ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়। জাবের, আশিকা এবং শান্ত তাদের বুদ্ধি দিয়ে এই চক্রের হাত থেকে রক্ষা পায়। তারা জানতে পারে, "ঈশ্বরের নীল আলো" আসলে একটি প্রাচীন দলিল যা মানবজাতির ইতিহাসের গভীর সত্য উদঘাটন করে।

কিন্তু সেই দলিল তারা পৃথিবীর সামনে প্রকাশ করবে কি? নাকি এটি গোপনই রাখবে? কারণ এই সত্য জানলে বিশ্বে শুরু হতে পারে অরাজকতা।

________________________________________

উপসংহার

জাবের, আশিকা এবং শান্ত ফিরে আসে ঢাকায়, কিন্তু তাদের জীবনে আর কখনো আগের স্বাভাবিকতা ফিরে আসে না। পাণ্ডুলিপি আর গুপ্তধনের অভিজ্ঞতা তাদের চিরতরে বদলে দেয়। তাদের সম্পর্কেও স্থায়ী পরিবর্তন আসে।

তাদের বাজপাখি শাহীন আর তিনটি ঘোড়া বিজয়, তুফান এবং ঝড়ও এই অভিযানের অংশ হয়ে থাকে।

________________________________________

উপন্যাসটি শেষ, কিন্তু পাঠকের মনে প্রশ্ন রয়ে যায়। সত্যি কি এমন কোনো গুপ্তধন আছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসকে বদলে দিতে পারে? নাকি সবই কেবল এক রোমাঞ্চকর কল্পনা?

Post a Comment

0 Comments