আয়নাঘরের বন্দীআলমগীর ইসলাম শান্ত
অধ্যায় ১: নিশির অন্ধকার
জুলাই মাসের একটি ভয়াল রাত। শহর ঢাকা, নিস্তব্ধ। হঠাৎ করেই পুলিশের সাইরেন এবং একদল কালো মুখোশধারীর উপস্থিতি যেন পুরো এলাকার নিস্তব্ধতাকে ভেঙে দেয়। রুবায়েত হোসেন, একজন তরুণ সাংবাদিক, তার ছোট ফ্ল্যাটে বসে আছেন। টেবিলের ওপর ছড়িয়ে আছে গোপন নথি। এই নথি "আয়নাঘর" নামে পরিচিত এক রহস্যময় জায়গার বিষয়ে।
আয়নাঘর ছিল এমন একটি স্থাপনা যেখানে রাষ্ট্রবিরোধী অভিযোগে মানুষদের ধরে নিয়ে যাওয়া হতো। কেউ ফিরত জীবিত, আর কেউ চিরতরে হারিয়ে যেত। রুবায়েত এই ভয়ংকর ইতিহাসের খোঁজ করতে গিয়ে নিজেকে গভীর ষড়যন্ত্রের মধ্যে জড়িয়ে ফেলেছেন।
অধ্যায় ২: শুরুটা কোথায়
কয়েক মাস আগে রুবায়েতের হাতে আসে একটি অজ্ঞাতনামা প্যাকেট। সেখানে ছিল একটি চিঠি এবং কিছু ছবি। ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছিল নির্যাতনের চিহ্ন এবং কিছু অচেনা মুখ। চিঠিতে লেখা ছিল, "আয়নাঘরের রহস্য উন্মোচন কর। সত্যিটা দেশবাসীর সামনে আনো।"
এই চিঠির পর থেকে রুবায়েত লক্ষ্য করলেন, তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। রাতের অন্ধকারে তার দরজায় অজানা কড়া নাড়ার শব্দ। কিন্তু তিনি থামেননি।
অধ্যায় ৩: গুম হওয়ার গল্প
শহরে গুম হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। প্রতিবেশী রাসেল গত সপ্তাহে নিখোঁজ হয়েছে। তার পরিবার থানায় গিয়ে কোনো সাহায্য পায়নি। রুবায়েত যখন রাসেলের পরিবারকে খুঁজতে যান, তখন তারা ভয়ে কথা বলতে রাজি হয় না। রাসেলের মা কেবল একটি কথাই বলেন, "আমার ছেলেকে আয়নাঘরে নিয়ে গেছে।"
রুবায়েতের কৌতূহল আরও বেড়ে যায়। তিনি খুঁজে পান একটি নাম – মেজর ইফতেখার। ইফতেখার আয়নাঘরের একজন প্রধান ব্যক্তি, যিনি এসব অপহরণ এবং নির্যাতনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
অধ্যায় ৪: ছায়ার মধ্যে প্রেম
এই অনুসন্ধানের মধ্যেই রুবায়েতের জীবনে আসে মায়া। মায়া একজন মানবাধিকার কর্মী, যিনি গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারকে সাহায্য করেন। মায়ার ভাইও একসময় নিখোঁজ হয়েছিলেন। রুবায়েত এবং মায়া একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন।
তাদের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে, কিন্তু মায়ার মনে ভয় থাকে। সে জানে, যারা আয়নাঘরের বিরুদ্ধে যায়, তারা বেশিদিন বাঁচে না।
অধ্যায় ৫: ভয়াল সত্যের মুখোমুখি
রুবায়েত এবং মায়া একটি গোপন তথ্য পায় যে আয়নাঘর শহরের উপকণ্ঠে একটি পুরনো কারখানার ভেতরে অবস্থিত। তারা সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু সেই রাতে রুবায়েতের ফ্ল্যাটে হামলা হয়। মায়াকে অপহরণ করে নিয়ে যায় মুখোশধারীরা।
রুবায়েত সিদ্ধান্ত নেন, তিনি একাই আয়নাঘরে প্রবেশ করবেন। তার লক্ষ্য একটাই – মায়াকে উদ্ধার করা এবং এই ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের সত্য উদঘাটন করা।
অধ্যায় ৬: আয়নাঘরের ভেতরে
রুবায়েত কারখানার গোপন দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন। ভেতরে অন্ধকার, শূন্যতা, এবং এক ভয়াবহ পরিবেশ। তিনি দেখতে পান ছোট ছোট কক্ষে বন্দী মানুষদের, যারা ভয়ে কাঁপছে।
একটি কক্ষে তিনি মায়াকে খুঁজে পান। কিন্তু ঠিক তখনই মেজর ইফতেখার এবং তার দল সেখানে উপস্থিত হয়। রুবায়েত বুঝতে পারেন, এটি একটি ফাঁদ।
অধ্যায় ৭: রক্তাক্ত সংঘর্ষ
রুবায়েতকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় একটি কক্ষে। সেখানে তাকে নির্যাতন করা হয়। কিন্তু তিনি মায়ার মুক্তির জন্য লড়াই চালিয়ে যান। মায়া একটি চুরি করা অস্ত্র দিয়ে নিজেকে মুক্ত করে এবং রুবায়েতকে সাহায্য করে।
তারা একসঙ্গে আয়নাঘর থেকে পালানোর চেষ্টা করে। এই সময়ে মেজর ইফতেখার এবং তার দল তাদের ধাওয়া করে। মরিয়া লড়াইয়ের পর, রুবায়েত এবং মায়া পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
অধ্যায় ৮: সত্যের উদঘাটন
রুবায়েত এবং মায়া তাদের সংগ্রহ করা প্রমাণ সাংবাদিকদের সামনে প্রকাশ করে। তারা ভিডিও ফুটেজ এবং নথিপত্র দেখিয়ে আয়নাঘরের ভয়াবহতা প্রকাশ করে। দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
মেজর ইফতেখার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। তবে আয়নাঘরের পুরো ষড়যন্ত্র কি শেষ হয়? নাকি এটি ছিল শুধুমাত্র বরফের চূড়া?
শেষ।
0 Comments